নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংস্কারের বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেছে। দলটি তাদের সেই প্রস্তাব সম্পর্কে জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ছাত্র–জনতা হত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবির বিষয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী, এ বিষয়ে জাপা নেতা জি এম কাদের বলেন, ‘ওনার নিজের এখানে এসে বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত। উনি এ দেশের নেতা ছিলেন। সবার সামনে ওনার জবাবদিহি করা, দোষ করলে স্বীকার করা, না করলে অস্বীকার, যেটাই হোক বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি, এটা স্বাভাবিক বিষয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশ ছেড়ে চলে যাননি। ওনাকে অনেকভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল। অফার দেওয়া হয়েছিল। উনি বলেছিলেন, আমি জনগণের সামনে কোন অপরাধ করিনি। আমি জনগণের সামনে দাঁড়াব। ওনার (শেখ হাসিনার) যদি সাহস থাকে, তার দেশে আসা উচিত। আর সাহস না থাকলে রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে বিতর্কিত সকল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়েও সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিও অংশ নিয়েছিল, আর নির্বাচনে অংশ নিলেই যদি সরকারকে বৈধতা দেওয়া হয়, সেই বৈধতা বিএনপিও দিয়েছিল।
২০২৪ সালে বারবার নির্বাচন থেকে সরে আসতে চেয়েও পারেননি বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত বল প্রয়োগ করে আমাদের নির্বাচন থেকে সরে আসার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়েছে। মিডিয়ার অনেক লোক, রাজনৈতিক অনেক নেতা এই বিষয়টি জানেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪ সালে আমাদের যখন নির্বাচন করতে বাধ্য করা হয়েছিল, তখন আমাদের কাছে বিকল্প কোন অপশন ছিল না। নির্বাচনে যেমন অংশ নিয়েছি, এতেকরে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছি।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা যদি না যেতাম, তাহলে কি নির্বাচন হতো না? আমরা যদি না যেতাম, আমাদের অন্য পক্ষকে নিয়ে যেত। আমরা না গেলেও নির্বাচন হতো। তাদের (আওয়ামী লীগের) পতন হয়েছে নির্বাচনের কারণে নয়, তাদের দুশাসন, গোঁয়ার্তুমি ও জেদের জন্য।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো দিতে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে জাপা পরামর্শ দিয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদের বলেন, সংস্কারের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিলে বোঝা যাবে পদ্ধতিতা কতটা কার্যকর হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি দলীয় প্রধান হতে পারবেন না বলেও মত দিয়েছেন তিনি।
জি এম কাদের বলেন, এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রী থাকলে তাঁর স্বৈরাচারী মনোভাব প্রকাশ পায়। তাই দুইবারের বেশি কেউ যাতে প্রধানমন্ত্রী হতে না পারে, সেই পরামর্শ জাপার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার কথাও বলা হয়েছে।
Leave a Reply