পরিবেশ নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে শহরের রাজপথেই নেমে এলেন একজন প্রযুক্তিনির্ভর লেখক ও ডিজাইনারঃ
খুলনার জোড়া গেট এলাকায় গত ৯ জুলাই ২০২৫, বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠিত হয় তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী সচেতনতামূলক আয়োজন “আমি পৃথিবীর অভিভাবক” শীর্ষক এক খোলা পরিবেশ সেমিনার।
বৃষ্টিস্নাত বিকেলে আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ—ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় পেশাজীবীরা। সকলের পরনে ছিল একটি বার্তাবাহী টি-শার্ট—যেখানে লেখা, “আমি পৃথিবীর অভিভাবক।” অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল একটি ভিন্নধর্মী বার্তা—শুধু কথা নয়, দায়িত্বশীল আচরণই পারে পৃথিবীকে রক্ষা করতে।
অনুষ্ঠানে এস কে মনোয়ার নাহিদ বলেন, “প্রতিদিনের ছোট ছোট সিদ্ধান্ত—যেমন বাতি নিভিয়ে রাখা, প্লাস্টিক কম ব্যবহার কিংবা গাছ লাগানো—এই ছোট কাজগুলোই বড় পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “এই গ্রহটা আমাদের সকলের, আর আমরা প্রত্যেকেই এর অভিভাবক।”
বক্তব্যের পরপরই আয়োজন করা হয় পরিবেশ বিষয়ক একটি কুইজ প্রতিযোগিতা। বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বিশেষভাবে তৈরি স্মারক মেডেল, যেখানে গর্বের সঙ্গে লেখা ছিল—“আমি পৃথিবীর অভিভাবক”।
এস কে মনোয়ার নাহিদ ইতোমধ্যেই পরিবেশ ও প্রযুক্তি বিষয়ে তাঁর লেখালেখির মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছেন। তাঁর লেখা “Guardians of Earth: Simple Steps to a Sustainable Future” বইটি জলবায়ু পরিবর্তন, পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা এবং পরিবেশবান্ধব অভ্যাস নিয়ে সহজ ও প্রাঞ্জল নির্দেশনা দেয়। এছাড়া সম্প্রচার প্রযুক্তি নিয়ে তাঁর লেখা “Creatives in Television Broadcast Industry” বইটিকে মনে করা হয় বাংলাদেশে এই বিষয়ে প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ।
শুধু লেখক নন, তিনি একজন অভিজ্ঞ টেলিভিশন গ্রাফিক্স ডিজাইনারও। দেশের শীর্ষ টিভি চ্যানেলগুলো—যেমন আরটিভি, যমুনা টিভি, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি এবং চ্যানেল ২৪-এ ১৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে সৃজনশীল নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর হাত ধরে এসেছে নির্বাচনী সম্প্রচারে রিয়েল-টাইম ডেটা, ভার্চুয়াল সেট, অগমেন্টেড রিয়েলিটি এবং স্বয়ংক্রিয় গ্রাফিক্স প্রযুক্তির আধুনিক ব্যবহার।
এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন দেশের বিভিন্ন পুরস্কার, যার মধ্যে রয়েছে—স্টার বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড ২০২৫, শের-ই-বাংলা স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫, এক্সেলেন্স ইন সাকসেস অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ এবং সুন্দরবন বেঙ্গল স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তাঁর স্বীকৃতি কম নয়। নেপালে আয়োজিত এশিয়ান বিজনেস আইকনিক অ্যাওয়ার্ড ২০২৫-এ তাঁকে ‘ব্রডকাস্ট ও ভিজ্যুয়াল গ্রাফিক্স’-এ সৃজনশীল নেতৃত্বের জন্য সম্মানিত করা হয়।
এর আগেও তিনি অংশ নিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের IBC আন্তর্জাতিক সম্প্রচার সম্মেলনে, যেখানে অ্যাডোবি ও ভিজআরটি’র পক্ষ থেকে তাঁকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।
শিক্ষাক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বর্তমানে পাঠশালা – দক্ষিণ এশিয়া মিডিয়া ইনস্টিটিউট-এ মোশন গ্রাফিক্স বিভাগের একজন ফ্যাকাল্টি হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি তাঁর প্রতিষ্ঠিত RudraFx নামের প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ছাড়াও পর্তুগাল, যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাই-এ সফলভাবে সম্প্রচার প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সেবা প্রদান করছে।
পরিবেশ ও প্রযুক্তি—দুই মেরুর মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে একজন সৃষ্টিশীল মানুষ সমাজ পরিবর্তনের শক্তি হয়ে উঠতে পারেন। এস কে মনোয়ার নাহিদের এই উদ্যোগ শুধুই ব্যক্তিগত অর্জন নয়—এটি এক অনুপ্রেরণা, যা বাংলাদেশের সৃজনশীলতা এবং পরিবেশ সচেতনতা উভয় ক্ষেত্রকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিশ্বদরবারে।
Leave a Reply